মঙ্গলবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৬

মহামন্ত্র কীর্ত্তন

মহামন্ত্রের ব্যাখ্যা

মহামন্ত্র কীর্ত্তন
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।
হরে রাম হরে রাম  রাম রাম  হরে হরে।।

এই মহামন্ত্র কীর্ত্তনই হইল আমাদের অপ্রাকৃত চেতনাশক্তি পুনর্জাগরণের একমাত্র দিব্য উপায়। মূলতঃ স্বরূপে আমরা সকল জীবই কষ্ণ চেতময়, কিন্তু অনাদি কাল হইতে জড় বস্তুর সংস্পর্ষে আমাদের চেতনা কলুষিত । যে জড় পরিবেশের মধ্যে বর্তমানে আমরা বাস করিতেছি , তাহাকে ’মায়া’ বা মোহ বলে। ’মায়া’ শব্দের অর্থ হইল যাহা নহে  .................\ ভৃত্য কৃত্রিম উপায়ে সর্ব-শক্তিমান প্রভুর অনুকরণ করিলে তাহাকে মায়া বলে। আমরা যতই জড়া প্রকৃতির উপর প্রভুত্ব করার চেষ্টা করিতেছি,প্রকৃত সম্পদ আত্মসাৎ করিবার চেষ্টা করিতেছি। প্রকৃত সম্পদ আত্মসাদ করিবার প্রয়াস করিতেছি, ততই প্রকৃতির নিয়ম শৃঙ্খলে মায়া জালে জড়াইয়া পড়িতেছি। প্রকৃতিকে জয় করিতে গিয়া প্রকৃতির অধীন হইয়া পড়িতেছি, ইহাই হইল ’ মায়া’। আমাদের শাশ্বত কৃষ্ণভাবনা পুনর্জাগরণের ফলে এই জড়া-প্রকৃতির সহিত এই মায়িক দ›েদ্বর অবসান ঘটানো যায়।
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।
হরে রাম হরে রাম  রাম রাম  হরে হরে ।।
এই মহামন্ত্র আমাদের চিন্ময় শুদ্ধ চেতনাশক্তির পুনর্জাগরণের অপ্রাকৃত পথ। এই অপ্রাকৃত ধ্বনি তরঙ্গ কীর্তন দ্বারা আমরা হৃদয়ের সমস্ত সংশয়, অবিশ্বাস দূর করিতে পারি, ঐসব সংশয় ও অবিশ্বাসের মূলে হইল ভ্রান্ত ধারণা, যথা-যাহা কিছু দৃশ্যমান, আমি তাহার ’প্রভু’। কৃষ্ণভাবনা এইরূপ কোন কৃত্রিম মানসিক উৎপীড়ন নয়; ইহা জীবের আদি শক্তি। যখন আমরা এই মহামন্ত্র শ্রবন করি, তখন আমাদের চেতনার পুনর্জাগরণ হয়। ভগবদুপলব্ধির এই সহজতম পথটিই হইল এ যুগের ধর্ম্ম। বাস্তব অভিজ্ঞতা(চৎধপঃরপধষ ঊীঢ়বৎরবহপব)হইতে বোঝা যায় যে, এই মহামন্ত্র কীর্ত্তনের সঙ্গে সঙ্গেই এক অপ্রাকৃত পরিবেশ অনুভব করা যায়। জড় দৃষ্টিতে আমাদের ইন্দ্রিয় সুখভোগ হইল নিম্ন পশুর স্ত-রভুক্ত।এই স্তর অপো সামান্য উন্নত জীব মায়ার বন্ধন হইতে মুক্তির জন্য মানসিক যুক্তি বলে নিয়োজিত হয়, ইহা অপো উন্নত যথেষ্ট বুদ্ধিসম্পন্ন জীব সকল কারণের পরম কারণ ভগবানের সন্ধানে তৎপর হয়। এই হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র কীর্ত্তন আধ্যাতিক স্তর হইতে কার্য করে এবং এইভাবে এই ধ্বনি তরঙ্গ চেতনার সকল নিম্নস্তর(ইন্দ্রিয়, মন ও বুদ্ধি) অতিক্রম করে। এইমন্ত্র কীর্ত্তনের জন্য মন্ত্রের ভাষা বুঝিবার প্রয়োজন নাই, কোন যুক্তিতর্কের প্রয়োজন নেই অথবা বুদ্ধির সহিত ঐক্যসাধন(ওহঃবষষবপঃঁধষ অফলঁংঃসবহঃ)-এর কোন প্রয়োজন নাই, ইহা স্বতস্ফ’র্ত আধ্যাতিক স্তর হইতে আসে, তাই কোন রকম পূর্ব যোগ্যতা ছাড়াই যে কেহ ’অপ্রাকৃত ধ্বনি’ -কীর্ত্তনে অংশগ্রহণ করিতে পারে।
এই বিষয়ের লণীয় বিষয়টি হইল, এই মহামন্ত্র কীর্ত্তন যতদূর সম্ভব শুদ্ধ ভক্তের শ্রীমুখ হইতে শ্রবণীয়। দুগ্ধ পরমোপাদেয় বস্তু হইলেও সর্পোচ্ছিষ্ট দুগ্ধ যেমন বিষবৎ পরিত্যজ্য, অভক্তের মুখ হইতে নাম শ্রবণও তদ্রুপ বিষবৎ। শুদ্ধ ভক্তের মুখ-নিঃসৃত  নাম শ্রবণে দ্রুত ফল লাভ হয়। 
’হরে’ অর্থাৎ ঈশ্বরের শক্তিকে সম্বোধন করা হয়। ’কৃষ্ণ’ ও ’রাম’ -এই উভয় শব্দের অর্থ পরম আনন্দ, ’হরা’ ঈশ্বরের পরম আনন্দময়ী শক্তি আমাদিগকে ঈশ্বর লাভে সাহায্য করে।’মায়া’ হইল ঈশ্বরের অসংখ্য শক্তির মধ্যে একটি, আর আমরাও একটি ভগবানের শক্তি। ভগবানের তটস্থাশক্তি জীব সকল মায়াশক্তি অপো অধিক উৎকৃষ্ট। এই উৎকৃষ্ট শক্তি জীব যখন নিকৃষ্ট শক্তি মায়ার সংস্পর্ষে আসে তখন এক অপ্রীতিকর(ওহপড়সঢ়ধঃরনষব) অবস্থার সৃষ্টি হয়। কিন্তু উৎকৃষ্ট তটস্থ্াশক্তি যখন ’হরা’ নামের পরম আনন্দময়ী শক্তির সংস্পর্ষে আসে তখন উহা আনন্দময় স্বাভাবিক অবস্থায় প্রতিষ্ঠিত হয়।
’হরা’, ’কৃষ্ণ’, ও ’রাম’ এই তিনটি শব্দ মহামন্ত্রের অপ্রাকৃত বীজ, কীর্ত্তন মায়াবদ্ধ জীবের উদ্ধারার্থে, ঈশ্বর ও তাঁহার শক্তির উদ্দেশ্যে চিন্ময় আহŸান। ুদ্র শিশু মাতৃক্রোড়ের জন্য ব্যাকুল সুরে ক্রন্দন করে, তেমনই আমাদেরও ব্যাকুল চিত্তে কীর্ত্তন করিলে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আমাদেরকে কৃপা লাভ করিতে সাহায্য করিবেন। আর যে আন্তরিকভাবে এই মহামন্ত্র কীর্ত্তন করে,  সেই ভক্তের নিকট ভগবান আত্মপ্রকাশ করেন।
এই কলহ ও কপটতার যুগে আত্মোপলব্দির উপায় মহামন্ত্র
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।
হরে রাম হরে রাম  রাম রাম  হরে হরে।। 
এই মহামন্ত্র কীর্ত্তন ব্যতীত জীবের অন্যকোন পন্থা নেই।

শেয়ার করুন

0 মন্তব্য(গুলি):