শনিবার, ১৩ জুলাই, ২০১৯

মহাদেবের পুজোর নিয়মাবলী ? কেমন পুজো শিবের পছন্দ?

মহাদেবের পুজোর নিয়মাবলী

কেমন পুজো শিবের পছন্দ?

শিব ঠাকুরের পুজো করলে মনের মত বর জুটবে—এই কথা আমি, আপনি বা প্রায় সকল মহিলারাই ছোটবেলা থেকে শুনে এসেছেন| কেউ পুজো করে নিশ্চয়ই ফল স্বরূপ মনের মত বরটিও পেয়ে গিয়েছেন! কিন্তু শুধু মনের মত বর ছাড়াও যদি আপনি মহাদেবকে তুষ্ট করতে পারেন তাহলে কিন্তু জীবনে সকল আশাই আপনার পূর্ণ হবে|

  


দেবাদিদেব মহাদেবকে তুষ্ট করার জন্য কিন্তু মোটেও পুজোর জাঁক-জমক বা অতি আড়ম্বরপূর্ণ ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন হয় না। কারণ মহাদেব খুব অল্পেই খুশি হন| শুদ্ধ মনে ভক্তি ভরে ডাকলেই তিনি আপনার প্রার্থনা শুনতে পাবেন। কিন্তু আপনার মন যদি কলুষিত হয় এবং ভক্তির অভাব হয় তাহলেই কিন্তু বিপদ। কারণ এমনিতে খুব শান্ত এই ভগবান যদি রেগে গিয়ে বা অসন্তুষ্ট হয়ে তাঁর তৃতীয় নয়ন প্রজ্জ্বলিত করেন, তাহলেই বিশ্ব-সংসার ছারখার হয়ে যাবে!তাই বলছি আপনি যদি মহাদেবের বন্দনা করতে চান, তাহলে আজকের লেখাটি পড়ে জেনে নিন ঠিক কীভাবে আপনি মহাদেবের পুজো করবেন|

পুজোর সামগ্রী

 আগেই বলেছি মহাদেব বড়ই আড়ম্বরহীন জীবনযাপন করেন। তাই তাঁর পুজোর জন্য শুধু আপনার মনের অপার বিশ্বাস, ভক্তি ও শ্রদ্ধা ছাড়া আর কিছুই চাই না| তবুও কী কী বস্তু আপনার প্রয়োজন হবে এই পুজোর জন্য তা একবার জেনে নিন|

আমরা সাধারণত মহাদেবের মূর্তি পুজো করি না। এক্ষেত্রে শিবলিঙ্গকেই তাঁর প্রতিরূপ হিসেবে পুজো করা হয়| তাই আপনিও যদি আপনার বাড়িতে শিব পুজো করতে চান সেক্ষেত্রে শিবলিঙ্গ আপনার প্রয়োজন হবে| এছাড়া চাই বেল পাতা| মহাদেবের সবথেকে প্রিয় বস্তু হল এই বেল পাতা| শুধু এই দিয়েই ভক্তি ভরে ডাকলে আপনি মহাদেবকে তুষ্ট করতে পারবেন|
তামার বা পাথরের বাটির প্রয়োজন হবে, কারণ শুধু মাত্র এই দুটি পাত্রেই শিবলিঙ্গটি স্থাপন করা হয়| এছাড়া কোশাকুশি,দীপ, ধূপ, শিবলিঙ্গটিকে স্নান করানোর জন্য একটি ঘটিতে জল ও অপর একটি ঘটিতে কাঁচা দুধ, সাদা চন্দন, পানীয় জল, নৈবেদ্য এবং প্রসাদ দেওয়ার জন্য ছোটো থালা এবং গ্লাস লাগবে।

বিষ্ণু মন্ত্র পাঠ

প্রথমে স্নান করে পুজোর স্থান পরিষ্কার করে দীপ-ধূপ জালিয়ে পুজোর আসন পেতে পুজোয় বসতে হবে| মনে রাখবেন আপনার শিবলিঙ্গ যেন উত্তর দিকে মুখ করে বসানো থাকে| প্রথমে আসনে বসে মহাদেব ও আদি শক্তি অর্থাৎ দেবী দুর্গার উদ্দেশ্যে প্রণাম জানাতে হবে| এরপর আপনার ইষ্ট দেবতাকে স্মরণ করে ইষ্ট মন্ত্র জপ করতে হবে| এরপর বিষ্ণু মন্ত্র উচ্চারণ করে পুজো আরম্ভ করতে হবে|

জল শুদ্ধি

শিবলিঙ্গের সামনে কোশাকুশিতে জল রেখে আপনাকে জল শুদ্ধি করতে হবে| কারণ এই জল পুজোর সামগ্রীর শুদ্ধিকরণের কাজে এবং পুজোর কাজে ব্যবহৃত হবে| ঠাকুরের আসনের সামনে আপনার হাতের বাঁ দিকে কোশা রেখে তাতে ডান হাতের মধ্যমা অঙ্গুলিটি স্পর্শ করিয়ে মন্ত্র উচ্চারণ করে সমগ্র তীর্থকে জলে আগমনের প্রার্থনা জানিয়ে জলকে শুদ্ধ করা হয়| এবার একটি ফুলে সাদা চন্দন লাগিয়ে তা দিয়ে শুদ্ধ জল নিজের মাথায় ছিটিয়ে নিন এবং সমগ্র পুজো সামগ্রীতে ছিটিয়ে নিন| এতে সব শুদ্ধ হয়ে যাবে|

স্নান

এরপর শিবলিঙ্গকে স্নান করাতে হবে| যে জলে শিবলিঙ্গের আচমন বা স্নান হবে তাতেও কিন্তু শুদ্ধ জল ছিটিয়ে নিতে হবে| একটি তামার পাত্রে শিবলিঙ্গটি রেখে প্রথমে কাঁচা দুধ এবং তারপর জল ঢেলে শিবলিঙ্গটিকে স্নান করাতে হবে নির্দিষ্ট মন্ত্র উচ্চারণ করে| এরপর শিবলিঙ্গ নির্দিষ্ট তামার বা পাথরের পাত্রে বসাতে হবে|

ধ্যান


এবার কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে মহাদেবের ধ্যান করে তারপর শিবলিঙ্গের মাথায় সাদা চন্দন মাখা বেল পাতা অর্পণ করতে হবে| এবারে ফুল ও বেল পাতা মহাদেবের চরণে অর্পণ করুন| দীপ ও ধুপ দেখিয়ে ভক্তি মনে মহাদেবের মন্ত্র উচ্চারণ করতে হবে| সব শেষে জল ও প্রসাদ দিয়ে প্রণাম করুন|
ধ্যানদেবাদিদেব মহাদেব হলেন এই জগতের অধিপতি, তাঁর অংশ এই বিশ্বের সব কিছুতেই বর্তমান| তাই আমাদের প্রত্যেকের মধ্যেই ভগবানের অস্তিত্ব বর্তমান| নিজের মনকে শুদ্ধ রাখলে এবং অন্যের প্রতি শ্রধা ও ভালবাসা রাখলেই কিন্তু ভগবান তুষ্ট হন| কোনো জাঁক-জমক বা লোক দেখানো আড়ম্বর না করে নিজের মনের পাপ ও অন্ধকার থেকে বেরিয়ে এসে সহজ সরল মনে ডাকলেই কিন্তু মহাদেবের আশীর্বাদ প্রাপ্তি ঘটবে|


শেয়ার করুন

0 মন্তব্য(গুলি):