মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্রঃ-মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্রের প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ঋগ্বেদে। তার পর যজুর্বেদ এবং অথর্ব বেদও নিজেদের শ্লোকে অন্তর্ভুক্ত করেছে এই মন্ত্রকে। এই অন্তর্ভুক্তি কি মন্ত্রের জনপ্রিয়তার ফল? না কি বহুল পাঠের কারণে চারটি বেদের মধ্যে তিনটিই গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছে মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র? এমনই তার মাহাত্ম্য? শ্লোকের দিকে তাকালেই এই মন্ত্রের মাহাত্ম্য স্পষ্ট বোঝা যাবে।
ঋগ্বেদ বলছে, ওম ত্র্যম্বকম যজামহে সুগন্ধিম পুষ্টিবর্ধনম। উর্বারূকমিব বন্ধনান মৃত্যুর্মুক্ষীয় মামৃতাম।
বলাই বাহুল্য, হিন্দু সংস্কৃতির প্রায় কোনও মন্ত্রই ওম ছাড়া শুরু হয় না! বিশেষ করে, শিবমন্ত্র। তাই, মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র জপের শুরুতেই ওম উচ্চারণ করে শুদ্ধ করে নিতে হয় আত্মাকে। আর, লক্ষ্য না করলেই নয়, ওম উচ্চারণেরও রয়েছে এক বিশেষ পদ্ধতি। নাভি থেকে উপরের দিকে নিঃশ্বাসের সঙ্গে বের করতে হয় ওম শব্দের ধ্বনি। মানে, প্রাণায়াম শুরু হল এই ধ্বনি উচ্চারণ দিয়েই।
ত্র্যম্বকমঃ- শিবের একটি নাম ত্র্যম্বক। অর্থাৎ যাঁর তিনটি চোখের মধ্যে একটি সূর্য, একটি চন্দ্র এবং অপরটি অগ্নি। বেঁচে থাকার জন্য মানুষের এই তিনটিরই তেজ প্রয়োজন। তাই যে মন্ত্র উদ্ধার করতে পারে মৃত্যু থেকে, তার অধিকর্তা ঈশ্বরকে সম্বোধন করা হয়েছে ত্র্যম্বক নামে।
যজামহেঃ- যজামহে মানে ত্র্যম্বককে যজন বা উপাসনা করি। তাঁকে শ্রদ্ধা জানাই।
সুগন্ধিমঃ- যে ঈশ্বরকে এই মন্ত্রে বর্ণনা করা হয়েছে, তিনি সুগন্ধিযুক্ত। এখানে শিবের সর্বাঙ্গে যে ভস্মের অনুলেপন, তাকেই ব্যাখ্যা করা হয়েছে সুগন্ধি হিসেবে। মানে স্পষ্ট- এই নশ্বর জীবন একদিন ভস্মেই পরিণত হয়। কিন্তু, মোক্ষ লাভ করতে পারলে, মৃত্যুভয় কেটে গেলে ওই ভস্মই হয়ে ওঠে সুগন্ধির সমতুল।
পুষ্টিবর্ধনমঃ- শিব, যিনি আমাদের মৃত্যু থেকে রক্ষা করেন, তিনি আমাদের পুষ্টিবর্ধনেরও সহায়ক। লক্ষ্য করার মতো বিষয়- পুষ্টি হলেই শরীর নীরোগ হয়। তাই, মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র শিবকে বর্ণনা করেছে পুষ্টিবর্ধন রূপে। উর্বারূকমিব: সংস্কৃতে উর্ব শব্দটিকে নানা ভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। কেউ বলেন উর্ব শব্দের অর্থ বিশাল, কেউ বা বলেন মৃত্যুর মতোই ভয়ানক। আর, আরূকম মানে যা আমাদের রক্ষা করে এই ভয় থেকে।
বন্ধনানঃ- বন্ধনান শব্দের মধ্যে বন্ধন শব্দটির উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। বিশাল, মৃত্যুর মতো ভয়ানক ভয় আসলে বন্ধনেরই নামান্তর। সেই বন্ধন থেকে আমাদের মুক্ত করেন মহামৃত্যুঞ্জয় শিব।
মৃত্যুর্মুক্ষীয়ঃ- মৃত্যু থেকে উদ্ধার করা।
মামৃতামঃ- মা শব্দটির অর্থ সংস্কৃতে না। তাহলে নয় অমৃতাম শব্দবন্ধের ব্যাখ্যা কি দাঁড়ায়? এই শব্দবন্ধে বলতে চাওয়া হয়েছে, শিব আমাদের মৃত্যু থেকে উদ্ধার করুন, কিন্তু অমৃত থেকে নয়। অমৃত এখানে জীবনের আনন্দের কথাই বোঝাচ্ছে।
মহামত্যুঞ্জয় মন্ত্র কীভাবে পৃথিবীতে এলঃ- শিবপুরাণ বলে, এই মন্ত্রের আবিষ্কর্তা ঋষি মার্কণ্ডেয়। মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র পাঠ করে তিনি উদ্ধার পান মৃত্যুর হাত থেকে। তার পরে এই মন্ত্র পৃথিবীতে জনপ্রিয় হয়। বেশ কিছু পুরাণ জানায়, প্রজাপতি দক্ষ চন্দ্রকে ক্ষয়রোগের অভিশাপ দিলে শিব-পত্নী সতী এই মন্ত্র দান করেন চন্দ্রকে। সোমনাথ-তীর্থে এই মন্ত্র পাঠ করে ক্ষয়রোগ থেকে মুক্তি পান চন্দ্র। আবার, স্বয়ং শিব এই মন্ত্র দান করেছিলেন দৈত্যগুরু শুক্রাচার্যকে। এই মন্ত্র পাঠ করেই দেবতাদের সঙ্গে যুদ্ধে মৃত অসুরদের বাঁচিয়ে তুলতেনম শুক্রাচার্য। তাই, একে মৃতসঞ্জীবনী মন্ত্রও বলা হয়। যা দেখা যাচ্ছে, ধর্মে বিশ্বাস থাকুক বা না-ই থাকুক, মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্রের একনিষ্ঠ এবং সঠিক উচ্চারণ আমাদের চালনা করে সুস্থ জীবনের পথে।।
মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্রঃ-JHP SANDWIP
প্রকাশিত হয়েছেঃ জুলাই ১৭, ২০১৯
0 মন্তব্য(গুলি):